গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা “চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্যা আর্থ” পুরষ্কার এ ভূষিত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় এবং পরিবেশ বিষয়ে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে বাংলাদেশের সুদূরপ্রসারী অসামান্য অবদানের জন্য তাকে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সফলতা সরেজমিনে পরিদর্শন ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে তুলে ধরার লক্ষ্যে ১৬ সেপ্টেম্বর”২০১৫ তারিখ বুধবার সকাল ৯.৩০ ঘটিকার সময় বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ডেপুটি প্রেস সচিব এর নের্তৃত্বে ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল পরিদর্শন করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিন বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা, সহকারী বন সংরক্ষক রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা। তারা প্রস্তাবিত ইনানী জাতীয় উদ্যান এর বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন শেষে ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় আরণ্যক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় নির্মিত সোয়ানখালী ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারে এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহন করেন। উক্ত সভায় তারা প্রকল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বিভিন্ন শ্রেনীর ব্যক্তিদের সাথে যেমন- বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির নের্তৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ, প্রকল্প কর্মকর্তাবৃন্দ, সহকারী বন সংরক্ষক, রেঞ্জ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা, বন পাহারাদল, বনরক্ষা দল এবং বনসংরক্ষন ফোরাম এর সদস্যদের সাথে বন, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষনের বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা এবং সফলতা লিপিবদ্ধ করেন করেন ও ক্যামেরায় ধারন করেন। সভার শুরুতে পারস্পরিক পরিচিতির শেষে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে প্রতিনিধিদলের সফরের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে আরণ্যক ফাউন্ডেশন ও শেডের কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন সিএমসির কোষাধ্যক্ষ জনাব নুরুল আমিন ভূট্টো এবং মাঠ পর্যায়ের প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকল্প সমন্বয়কারী। এসময় তিনি আগত অতিথিদের প্রত্যকের হাতে প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একটি করে ফোল্ডার তুলে দেন। তারপর উপস্থিত সাংবাদিকগণ প্রকল্প সুবিধাভোগীদের সরাসরি প্রশ্ন করে ও সাক্ষাৎকার ধারণ করেন। এ সময় তারা সোয়ানখালী ইকোট্যুরিজম সেন্টারের ভিতর দিয়ে এক ঘণ্টার পায়ে হাঁটার প্রাকৃতিক পথের দুই পাশের গভীর বনাঞ্চল ক্যমেরায় ধারণ করে এক কি.মি. পথ অতিক্রম করে ১ নং গোল ঘরে গিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় বিভাগীয় বনকর্মকর্তার সাক্ষাৎকার ধারণ করেন। তিনি এ বনাঞ্চলের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন ইনানীর এ বনাঞ্চল একসময় জীব-বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ছিল এবং ছিল বৃহৎ স্থলজ প্রানী এশিয়ান হাতির অবাধ বিচরনক্ষেত্র। তাই এখন বনবিভাগ আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় শেডকে সাথে নিয়ে এ হারিয়ে যাওয়া জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১০০০০ হেক্টরের এই বনভূমির উপর সরাসরি নির্ভরশীল ২০০০ পরিবারকে বিকল্প জীবীকায়নের মাধ্যমে বননির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব হয়েছে। তাদের বিকল্প জীবিকায়ন প্রদান করার ফলে বনের উপর চাপ কমেছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বনের ৭০০০ হেক্টর কোর জোনে হারানো প্রজাতির দেশীয় বৃক্ষের বনায়ন, পশু খাদ্যের বাগান সৃজন, হাতির খাবারের জন্য বনায়ন করার ফলে সবুজায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে হারানো জীব-বৈচিত্র্য ফিরে আসা শুরু হয়েছে। বনবিভাগের তথ্য মতে বর্তমানে এ বনে প্রায় ৩১৭ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৩১৬ প্রজাতির প্রানী রয়েছে এবং ২০১০ সালের তুলনায় বনের বৃক্ষ আচ্ছাদনের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় কমিউনিটি বন পাহারাদলের বিট কর্মকর্তার সাথে স্বতস্ফুর্ত বনপাহারা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যা বনজ সম্পদ রক্ষায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বনপাহারা দলের সহযোগিতায় বিট কর্মকর্তারা প্রতি বছর অঢেল বনজ দ্রব্য জব্দ করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে। সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে দ্বন্দ্ব নিরসন করার ফলে বন মামলা কমেছে অনেকাংশে। তিনি আরও বলেন শেড-আরণ্যক ফাউন্ডেশন এর সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলে উপজাতি চাকমা সম্প্রদায় এখন আর জুম চাষ করে না। তারা আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বিকল্প জীবিকায়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। যা বন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে।
পরবর্তীতে বনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন টেলিভিশন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সফলতা, বন সংরক্ষণে ভূমিকা এবং বনপাহারাদলের ঝুঁকি নিয়ে সিএমসির কোষাধ্যক্ষ ও সদস্য, বনরক্ষা দলের সদস্য, বনপাহারা দলের সদস্য, বন পাহারাদলের সভাপতি, শেডের ফিল্ড সুপারভাইজার, ও রেঞ্জ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন। সাক্ষাতকারে শেডের ফিল্ড সুপারভাইজার বলেন, আরণ্যক ফাউন্ডেশন শেড ও বনবিভাগ কে সাথে নিয়ে বন ও বনের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে, বনজীবী মানুষের উন্নয়নে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করনের লক্ষ্যে বন বাঁচায় আমাদেরকে, আমরা বাঁচাব বনকে শীর্ষক শ্লোগানকে সামনে নিয়ে বন সংরক্ষনের লক্ষ্যে স্থানীয় বননির্ভরশীল জনসাধারনকে সংগঠিত করে সমাজ ভিত্তিক সংগঠন তৈরী করে তাদের বিকল্প জীবিকায়নের মাধ্যমে বনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বন সংরক্ষণ কৌশল গ্রহন করে। তাদের বিকল্প জীবিকায়নের লক্ষ্যে আরণ্যক ফাউন্ডেশন তাদের যথাযথভাবে সংগঠিত করে বিধিবদ্ধভাবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে তাদের ব্যাংক হিসাবে ৩৪,৪০০০০/- টাকা ঘুর্নায়মান তহবিল হিসেবে প্রদান করে। পাশাপাশি তাদের ব্যাংক হিসাবে নিজস্ব সঞ্চয় দাড়িয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। এছাড়া ও প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বনরক্ষা দলের সদস্যদের জ্বালানী সাশ্রয়ী উন্নত চুলা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, গাছের চারা, সবজী বীজ, সার, মৌসুমী ফলের চারা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রদান করা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া তিনি আরও বলেন আমরা প্রকল্পের পক্ষ হতে একজন প্রকল্প সুবিধাভোগী মোঃ রফিক উদ্দিন কে বাংলাদেশ বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, চট্টগ্রাম এ রাসায়নিক সংরক্ষনী প্রয়োগের মাধ্যমে পানের বরজে ব্যবহৃত খুঁটির জীবনীকাল বৃদ্ধির প্রকল্পের জন্য প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা এবং প্রশিক্ষণ পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছি। যা অত্র এলাকারা বনজ সম্পদ রক্ষায় এবং বন সংরক্ষণে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। উপস্থিত সকলে উক্ত প্রকল্পের ভূয়সী প্রসংশা করেন।
উক্ত পরিদর্শন দলে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন, চ্যানেল ৭১, সময় টিভি, বৈশাখী টেলিভিশন, এসএ টেলিভিশন, সিনহুয়া নিউজ এজেন্সী, বাংলাভিশন এর প্রতিবেদক এবং ক্যামেরাম্যানবৃন্দ। প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক কালেরকন্ঠ, এবং দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক যায়যায়দিন এর প্রতিবেদকবৃন্দ। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দল টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।