চাকমাপাড়ায় বননির্ভরশীল মহিলাদের হস্তশিল্প প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ মার্কিন রাষ্ট্রদুত ড্যান মজীনা বলেন- বিকল্প জীবিকায়নের মাধ্যমে বন ও পরিবেশ রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
গত ডিসেম্বর ১২, ২০১৪ ইং তারিখে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদুত ডব্লিও ড্যান মজীনা সহ USAID এর কান্ট্রি ডিরেক্টর জেনিনা জেরুজেলস্কি এর নের্তৃত্বে USAID এর প্রতিনিধিদল শেড কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ও রক্ষিত বনাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেন। এছাড়াও উক্ত পরিদর্শনে আরন্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদের নের্তৃত্বে আরন্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জনাব আব্দুল আওয়াল সরকার, সহকারী বন সংরক্ষক জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী, ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা জনাব মীর আহমেদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, উপজেলা পুলিশ প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সকল স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক সহ অন্যান্য গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। প্রকল্প বাস্তবায়নকৃত এনজিও সোসাইটি ফর হেলথ এক্সটেনশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (শেড)-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ উমরা গোটা পরিদর্শন দলের নের্তৃত্ব দেন। জনাব মোহাম্মদ উমরা এর নের্তৃত্বে মার্কিন রাষ্ট্রদুতের প্রতিনিধি দল প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। ১২ ডিসেম্বর সকাল ৭.০০ ঘটিকার সময় কক্সবাজার শহর হতে প্রায় ৩৫ কি মি দূরের সোয়ানখালী বিট অফিস সংলগ্ন আরন্যক ফাউন্ডেশন ও শেড এর ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সহায়তায় বনবিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত নবনির্মিত ইনানী ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় পাখির গুঞ্জনে মুখরিত পরিবেশে তিনি মুগ্ধ হন। পরে ৮.৩০ মিনিটের সময় ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার সংলগ্ন পাহাড়ী মেঠো পথ বেয়ে এক ঘন্টার পায়ে হাঁটার ট্রেইল হাইকিং এ অংশগ্রহন কালে উঁচু পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে এক মনোরম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করেন যার একপাশে সাগরের বিস্তীর্ন নীল জলরাশি আর অন্য পাশে সবুজ চাদরে ঢাকা গহীন সবুজ পাহাড়ী বনাঞ্চল। এই সময়টিকে তিনি তাঁর জীবনের অন্যতম স্মরনীয় মূহূর্তগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেন। পরে তিনি ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি সহ বিভিন্ন শ্রেনীর পেশাজীবী স্টেকহোল্ডার ও কমিউনিটি বন পাহারাদলের সাথে মতবিনিময় করেন। উক্ত মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শেড এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ উমরা, আরন্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদ, সিএমসি সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জনাব আব্দুল আওয়াল সরকার, USAID এর কান্ট্রি ডিরেক্টর জেনিনা জেরুজেলস্কি সহ প্রতিনিধিদল, আরন্যক ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম সিনিয়র অফিসার ড. আব্দুল কুদ্দুস, জনাব আব্দুল মান্নান, সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী, ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা মীর আহমেদ, উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, প্রকল্প সমন্বয়কারী, প্রকল্প কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট বনবিট কর্মকর্তা, চাকমা কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দ, বন পাহারাদল ও বন সংরক্ষণ দলের সদস্য ও নের্তৃবৃন্দ। তিনি এই সময় বলেন অংশীদারীত্বের মাধ্যমে বনজ সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পর্যটন নগরীর এ অঞ্চলে অনেক সম্ভাবনাময় ইকো-ট্যুরিজম খাতের উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করে এই বন উপকূলীয় বাংলাদেশের সুরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তিনি কমিউনিটি বনপাহারাদলের সদস্যদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহন শেষে সকাল ১০.৩০ মিনিটে মাদারবনিয়া চাকমা পল্লী পরিদর্শন করেন। এই সময় শেড এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ উমরা মার্কিন রাষ্ট্রদুত ড্যান মজীনা, USAID এর কান্ট্রি ডিরেক্টর জেনিনা জেরুজেলস্কি সহ প্রতিনিধিদল, আরন্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব ফরিদ উদ্দিনসহ আরন্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি দল, উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, বন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সামনে বিকল্প জীবিকায়নের জন্য প্রকল্পের বিভিন্ন চলমান কার্যক্রম সরেজমিনে তুলে ধরেন। শেড এর প্রদানকৃত ঘুর্নায়মান ঋণ তহবিলের সহযোগিতায় বিকল্প জীবিকায়ন কার্যক্রম ও বননির্ভরশীল চাকমা পুরুষ মহিলাদের হস্তশিল্প কার্যক্রম দেখে ড্যান মজীনা মুগ্ধ ও বিস্মিত হন। তিনি এসময় চাকমাদের বাড়ির চারপাশে সবজি চাষ, হাস-মুরগীর খামার, গবাদি পশু পালন, মৃত শিল্প, হস্ত শিল্প, তাঁত বুননের কাজ, মাছ শিকারের জাল তৈরীর প্রক্রিয়া এবং উন্নত চুলার ব্যবহার স্বচক্ষে পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদুত এসময় বলেন পাহাড়ী এলাকায় যারা বন নিধন করে জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত তারা আজ বিকল্প জীবিকা হিসেবে কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প, কৃষিখামার ও পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে বন সংরক্ষনে সরাসরি সক্রিয় অংশগ্রহন করছে। বন ও পরিবেশ সংরক্ষনে এটা একটা বিরাট অর্জন।
প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে ড্যান মজীনা একটি সংবাদ সম্মেনলনে অংশগ্রহন করেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন পরিকল্পিতভাবে পতিত জমিতে বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুতর দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব। যারা পূর্বে বন ধ্বংস করে জীবিকা নির্বাহ করত তারা এখন নিজেরাই বন রক্ষা করছে এবং বন সংরক্ষণে সক্রিয় অংশগ্রহন করে বিকল্প ভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। পরিবেশ, বন ও বনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় এই অসামান্য অর্জন নিসন্দেহে একটি বিপ্লব। এই বিপ্লব সাধনের সম্পূর্ন কৃতিত্ব শেড ও আরন্যক ফাউন্ডেশনের। আর এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন সরাসরি মাঠে এসে স্বচক্ষে দেখা নিসন্দেহে আনন্দের। আমি এই পরিবর্তিত দৃশ্য দেখতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত এবং এই কর্মযজ্ঞের সাথে জড়িত সকলের সাথে এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাই। এই অনুকরণীয় এবং প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য শেড ও আরন্যক ফাউন্ডেশন কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে শেড –এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ উমরা শেড-এর বাস্তবায়নকৃত প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শন করার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদুত, USAID এর কান্ট্রি ডিরেক্টর, আরন্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সহ পরিদর্শনে অংশগ্রহনকারী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও আর্থিক সহযোগিতা পেলে শেড বনজীবী মানুষের উন্নয়নে ও বন সংরক্ষনে আরও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি আর্থিক সহযোগিতার জন্য সার্বিকভাবে আরন্যক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান।